কোরবানির ঈদ (ঈদুল আযহা) নামাজের সঠিক নিয়ম, নিয়ত ও তাকবীর
আমাদের মাঝে ইতিমধ্যে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ চলে এসেছে। মুসলিমদের দুইটি খুশির দিন থাকে তার মধ্যে একটি ঈদুল ফিতর এবং আর একটি ঈদুল আযহা। আমরা ঈদের সময় যত ব্যস্ত থাকি না কেন সকলেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সকলে একসাথে ঈদের খুশি উপভোগ করতে চাই।
কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহার নামাজ আমরা অনেকেই ভুল করে থাকি বা সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে জানিনা। আমরা অনেকেই রয়েছি যারা নিয়ত ও থাকবে সম্পর্কে ও অবগত নয়। যে কারণে আজকে আমরা এই সংক্রান্ত তথ্যগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা কোরবানির ঈদ বা ঈদ উল আযহা নামাজের সঠিক নিয়ম, নিয়ত ও তাকবীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন জেনে আসি কোরবানি ঈদের নামাজ সম্পর্কে।
কোরবানির ঈদের নামাজের সঠিক নিয়ম, নিয়ত ও তাকবীর
সকল মুসলিমদের জন্য কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহা অত্যন্ত খুশির একটি দিন। আমরা এই দিনে অনেক বেশি খুশি থাকে অন্যান্য দিনের তুলনায়। দিনটি উপভোগ করার জন্য আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে সকলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে এবং একসাথে দিনটি উদযাপন করি। কোরবানি ঈদের নামাজের সঠিক নিয়ম, নিয়ত এবং তাকবীর সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
ঈদুল আযহার নামাজ কত রাকাত
ঈদুল আযহার বা কোরবানির ঈদ এর নামাজ দুই রাকাত। আমরা এই নামাজ মসজিদে এবং ঈদগাহে সকলে একসঙ্গে আদায় করে থাকি। অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীরের শহীদ আমরা কোরবানি ঈদের নামাজ অথবা ঈদ উল আযহার নামাজ আদায় করে থাকি।
ঈদুল আযহার তাকবীর কয়টি
ঈদুল আযহার নামাজ ওয়াজিব। ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করতে হলে আমাদের অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীরের প্রয়োজন হয়। এই ছয়টি তাকবীরের মাধ্যমে আমরা ঈদুল আযহার নামাজ সম্পন্ন করতে পারি।
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম
আমরা বছরে একবার ঈদুল আযহা উদযাপন করে থাকি। ঈদুল আযহার নামাজ ওয়াজিব। ঈদুল আযহার নামাজ দুই রাকাত। ঈদ-উল আযহার নামাজ আমরা ইমামের পিছনে পড়ে থাকি। ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- প্রথমত ঈদগাহে ইমামের পিছনে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়াতে হবে।
- তারপরে নামাজের নিয়ত করবেন।
- অতঃপর ইমাম যখন প্রথম তাকবীর দেবে ”আল্লাহু আকবার” আপনারা ইমামের সাথে হাত বাধবেন। হাত বাধার পরে ছানা দোয়াটি পড়বেন।
- তারপরে ইমাম এর সাথে দুইটি পরপর থাকবেন দেবেন এই দুইটা তাকবীরে হাত ছেড়ে দেবেন।
- তারপরে তাকবীরে অর্থাৎ তৃতীয় তাকবীরে গিয়ে হাত বাঁধবেন। এবার ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বেন। এবার অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবে রুকু, সীজদা করে প্রথম রাকাত নামাজ শেষ হবে।
- অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে শুরুতে ইমাম সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি ছড়া মিলাবেন। তারপর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে পরপর তিনটি তাকবীর দেবে এবং হাত ছেড়ে দেবে। তৃতীয় তাকবীর দিয়ে সোজাসুজি রুকুতে চলে যেতে হবে। এবারও অন্যান্য নামাজের মত রুকু, সিজদা করে আখেরি বৈঠকের মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এভাবেই আপনারা কোরবানির ঈদের নামাজ অথবা ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করবেন।
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত
যে কোন নামাজের জন্য আমরা নিয়ত করে থাকি। আমরা যারা নিয়ত করতে পারব তারা অবশ্যই নিয়ত করব। আর যারা নিয়ত করতে পারবোনা তারা এমনিতেই নামাজ পড়বো। আল্লাহ তো জানে যে আমরা কি উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ছি সুতরাং মনের নিয়্যাত বড় নিয়াত।
আমরা অনেকেই আরবী জানি না। যে কারণে আমরা ভাবি আমরা কিভাবে নিয়ত করব বা বাংলায় নিয়ত হয় কিনা। অবশ্যই বাংলায় আপনারা নিয়ত করতে পারবেন যদি আরবি না জানেন। ঈদুল আযহার নামাজ এর আরবি এবং বাংলা নিয়ত নির্ণয় উল্লেখ করা হলো।
ঈদুল আযহা নামাজের আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ
الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا
الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
উচ্চারণঃ- “নাওয়াইতু
আন উছ ল্লিয়া লিল্লাহি
তায়আলা রাকয়াতা ছালাতিট ঈদুল আযহা মাআছিত্তাতি তাক-বীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু
বিহাজাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ঈদুল আযহা নামাজের বাংলা নিয়ত
হে আল্লাহ, আমি কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের শহীদ ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার।
ঈদুল আযহা নামাজের তাকবির পাঠের কারণ কি
ঈদের নামাজের তাকবীর পাঠের কারণ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। এটি মূলত ঈদের প্রথম কাজ। নিম্নে তাকবীরটি উল্লেখ করা হলো।
ঈদুল আযহা নামাজের নামাজের তাকবীর
বাংলা উচ্চারণঃ- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ,ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
ঈদুল আযহা রাতের নামাজের ফজিলত
আমরা জানিনা ঈদুল আযহার রাতগুলো আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ঈদুল আযহার নামাজ ওয়াজিব। ঈদ যেমন আমাদের জীবনে আনন্দের বাত্রা নিয়ে আসেন। তেমনিভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ও সুযোগ নিয়ে আসেন। ঈদের রাত এর ফজিলত সম্পর্কে আমরা জানিনা। কিন্তু ঈদের রাতের ফজিলত এর কথা বহু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। চলুন সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় ঈদের রাত্রি যাপন করবেন এবং ইবাদত করবেন সেই ব্যক্তির হৃদয় ওইদিন মৃত্যুবরণ করবে না। (ইবনে মাজহ)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, বলেন, যে ব্যক্তি চারটি রাত ইবাদতের উদ্দেশ্যে জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। রাত চারটি হলঃ-জিলহজ মাসের আট তারিখ, ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাত, আরাফার রাত। (কানযুল উম্মাল)
আমাদের সকলের উচিত ঈদের রাত্রে আমাদের জাগ্রত থেকে নামাজ, জিকির, এবং বিভিন্ন আমল করা। বেশি বেশি দোয়া পাঠ করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, কবরের আজাব এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া ইত্যাদি।
ঈদুল আযহার দিনের নামাজের ফজিলত
ঈদুল আযহার অথবা কোরবানির ঈদের দিনের সবচেয়ে ফজরের পূর্ণ আমল হচ্ছে পশু কোরবানি করা। রাসূলুল্লাহ সাঃ কোরবানি কৃত পশুর রক্ত প্রবাহিত করার পূর্বেই আল্লাহর কাছে তার নির্ধারিত মর্যাদার স্থান পায়। কিয়ামতের দিন কোরবানির পশুর শিং, লোম, খুর প্রভৃতি নিয়ে উপস্থিত হবেন।
ঈদুল আযহার উদ্দেশ্যে নামাজের পূর্বে গোসল করা, যথাসাধ্য পরিষ্কার এবং সুন্দর পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদগাহে যাবার এবং আসার পূর্বে আলাদা রাস্তা ব্যবহার করা, উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা এই সবগুলোই সুন্নত।
ঈদুল আযহার দিনে খালি পেটে নামাজ আদায় এবং নামাজে যাওয়া সুন্নত। দ্রুত কোরবানি সম্পন্ন করে কোরবানি কৃত পশুর মাংস দিয়ে খাবার খাওয়া মুস্তাহাব। কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা এবং তার সাথে সঠিকভাবে বন্টন করা মুস্তাহাব।