শিমের বিচির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

শিমের বিচির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

শিমের বিচির উপকারিতা

ভাত রুটি এর পাশাপাশি শিমের বিচে পৃথিবী জুড়ে মানুষের অন্যতম প্রিয় খাবারের তালিকা রয়েছে। বাংলাদেশের সিম বাজারে ওঠে শীতকালে। বর্তমান সময়ে বা শীতকাল ব্যতীত অন্য সময়ের যদি সিমের বিচি বাজারে ওঠে তাহলে বাজার মূল্য অনেক বেশি থাকে।  সিমে অনেক শর্করা ও আমিষ রয়েছে। তাই সিমের বেশি আমাদের শরীরে  শক্তি যোগায় এবং পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে থাকে। আসন এই সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য জেনে আসি।

আমাদের অনেকেরই পছন্দের তালিকায় সিমের নাম থেকে থাকে। সিম খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাদ্য। সিম, সিমের  বিচি, এবং সিমের পাতা ও শাক হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। সিমের বিচিতে রয়েছে অতি উচ্চমানের ফাইবার প্রোটিন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সিমে কোন প্রকার কোলেস্টেরল নেই। সিম এ রয়েছে ২০ ভাগ প্রোটিন ও উচ্চমাত্রার কার্বহাইড্রেট।

এছাড়াও সিমের রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও আয়রন। সিম আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শক্তি যোগায় ও ক্রনিক রোগ দূর করতে সাহায্য করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, কালো সিমের বিচি কোলন ক্যান্সারের বিপরীতে শক্তিশালী  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

শিমে রয়েছে ভিটামিন বি৬ যা আমাদের শরীরে অ্যামিনো এসিড তৈরি করে। আর এটি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সিম আমাদের হজম শক্তিতে ও সাহায্য করে থাকে। সিম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য।

শিমের বিচিতে নাকি মাংস তে আমিষ বেশি রয়েছে

আমরা এখন জানব সিমের বিচিতে নাকি  মাংসে আমিষ বেশি রয়েছে সে সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোনটাতে আমিষ বেশি।

সিমের বিচিতে  প্রতি ১০০ গ্রামে আমিষ রয়েছে ২৪.৯ গ্রাম। আর গরুর মাংসে ১০০ গ্রামে আমিষ রয়েছে ২২.৬ গ্রাম। আর মুরগির মাংসে আমিষ রয়েছে প্রায় ২৫.৯ গ্রাম। এ থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে গরুর মাংসের চেয়ে সিমে আমিষের পরিমাণ বেশি রয়েছে। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি মুরগির মাংসের সবচেয়ে বেশি আমিষ রয়েছে।

তারপরে সিমের বিচিতে এবং তারপরে গরুর মাংসে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই আমিষের অভাবজনিত রোগগুলো দেখা দিয়ে থাকি শিশু অথবা বড় উভয়দের ক্ষেত্রেই। এক্ষেত্রে আমরা সিমের বীচে খেতে পারি। এতে করে  আমরা দ্রুত আমিষ জনিত রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমরা জানি ডালে প্রচুর পরিমাণ  আমিষ রয়েছে তেমনি ভাবে সিমের বিচেতে ও অনেক আমিষ রয়েছে।

যে কারণে আমরা শাকসবজি খেলেও আমাদের শরীরে আমিষের  ঘাটতি হবে না। সিমের বিচিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থেকে থাকে যা হাড়ের ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আরও সিমের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে আশ থাকার কারণে হজমেও সাহায্য করে থাকে। যে কারণে আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম দেখা যায়। সিমের বিচি আমাদের শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।

শিমের বিচি সংরক্ষণ করে কেন

পুষ্টিকর খাবার দের তালিকার ওপরের দিকের খাবার  সিমের বিচে। সিমের বেশি যেমন পুষ্টিকর তেমন খেতেও অনেক বেশি সুস্বাদু। এই খাবারটিতে প্রোটিনের একটি বড় উৎস রয়েছে। এতে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর এই খাবারের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এতে কোলেস্টেরল নেই। সিমের বীচে আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সিমের বিচি দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়। তরকারির সঙ্গে সিমের বিচি ব্যবহার করে তরকারি রান্না করা বেশ পরিচিত।

সেম শীতকালীন একটি সবজি যে কারণে এটি মূলত শীতকালে বেশি পরিমাণ দেখা যায় এবং বিচি শীতকালে পাওয়া যায়। তবে অনেকেই এই  বিচিগুলো সারা বছর সংরক্ষণ করে রাখে। আমরা অনেকেই সিমের বেশি সংরক্ষণ করতে জানি না। চলুন জেনে আসি কিভাবে সিমের বিচি সংরক্ষণ করতে হয়।

শিমের বিচি সংরক্ষণ করতে যা করবেন

আমরা অনেকেই রয়েছি যারা সারা বছর সিমের বিচি খেতে চাই। কিন্তু কিভাবে সংরক্ষণ করে রাখবো কিভাবে সারা বছর খাব তা জানি না। চলুন জেনে আসি কিভাবে সিমের বিচি সংরক্ষণ করা যায় সারা বছর এর জন্য।
  •  প্রথমে আপনি যেই বিচিগুলো সংরক্ষণ করতে চাচ্ছেন সেগুলো একটি পাত্রে সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন।
  •  তারপরে সকাল বেলায়  সিমের বিচির খোসা গুলো ছাড়িয়ে নেন।
  •  তারপরে একটি পরিষ্কার পাত্রে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে চুলায় জাল দেন, এবং তার মধ্যে সিমের বিচিগুলো দিয়ে দিন। হালকা গরম বা এক বলক পর্যন্ত জাল দিতে থাকুন। অবশ্যই সেদ্ধ করা যাবে না।
  •  জাল দেওয়া শেষ হলে বিচিগুলো ঠান্ডা পানিতে রেখে ধুয়ে নিন।
  •  সিমের বিচিগুলো ধোয়া হলে এবং বিচিগুলো ঠান্ডা হলে একটি এয়ার টাইট বক্সে ভরে ফ্রিজের দ্বিপ অংশে সংরক্ষণ করে রাখুন।
এভাবে আপনারা সিমের বিচি সংরক্ষণ করতে পারেন।  তারপরে পরিমাণমতো বের করে সারা বছর রান্না করে খেতে পারেন।

শিমের বিচির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

শিমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

আমরা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছি সিম আমাদের জন্য খুবই কার্যকরী একটি খাবার। সিমে অনেক আমিষ এবং অন্যান্য ভিটামিন ও রয়েছে। চলুন জেনে আসি সিমের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
  1.  সিম খেলে গলা ব্যথা এবং চোখের সমস্যা থেকে উপকৃত লাভ করা যায়।
  2.  সিমে খনিজ উপাদান রয়েছে এছাড়াও প্রোটিন, শর্করা, লৌহ রয়েছে।
  3.  এছাড়াও রয়েছে জিংক, ভিটামিন সি, আরও অন্যান্য খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ।
  4.  সিম চুল পড়া দূর করে থাকে।
  5.  কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ দেয়।
  6.  কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  7.  গর্ভবতী নারী ও শিশু পুষ্টিগত সমস্যা গুলো দূর করতে সাহায্য করে।
  8.  নিয়মিত সিম খেলে ত্বকের আদ্রতা ফিরে আসে।
  9.  সিম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  10.  আমরা জানি সিমের ফুল রয়েছে সেই ফুলও আমাদের উপকৃত করেন।  সিমের ফুল আমাদের রক্ত আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে।
  11.  সিম  স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  12.  স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  13.  মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  14.  এলার্জির সমস্যা থাকলে তাতে কার্যকারের ভূমিকা পালন করে থাকে।
  15.  হজম শক্তিতে সাহায্য করে।
  16.  চর্বি কমাইতে সাহায্য করে।
  17. সিমে কেমন উপকার রয়েছে
আমরা উক্ত আলোচনাগুলো থেকে ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছি যে সিমে অনেক অনেক উপকার রয়েছে। যেগুলো আমাদের সকলের  জানা উচিত। আমরা বেশি বেশি জানাচ্ছেন সিম খেতে পারি এবং কেন খাচ্ছি এগুলো জানতে পারলে আমাদের খাবার আগ্রহটা অনেকটাই বেড়ে যাবে।

একটি মানুষের জন্য  সিম খুবই কার্যকারি ভূমিকা পালন করে থাকে।  উক্ত আলোচনা থেকে আমরা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছি সিম আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার।

কমেন্ট

Previous Post Next Post