যাকাত আরবি শব্দ যার অর্থ পরিশুদ্ধকরন, পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। প্রত্যেক মুসলিম নর নারীদের প্রতিবছর নিজের উপার্জন বা সম্পত্তির একটি অংশ যদি তা ইসলামের শরীয়ত অতিক্রম করে তবে গরিব ও দক্ষ শ্রোতদের মধ্যে বিতরণ করার নিয়মকে যাকাত বলা হয়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ। যারা সম্পদশালী তাদের ওপর শুধুমাত্র এটি ফরজ করা হয়েছে। যাকাত শব্দটির পবিত্র কুরআনে ৩২ বার উল্লেখ করা হয়েছে। নামাজ এর কথা সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে কোরআন মাজীদে। তারপরেই যাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারছি যাকাত আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য পুরো কনটেন্ট জুড়ে আলোচনা করা হবে। আপনি যদি যাকাত সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পুরো কন্টেন্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে যাকাত সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম
যাকাত দেওয়ার কিছু নিয়ম বা শর্ত আছে। সকলের উপর যাকাত ফরজ নয়। একজন ব্যক্তি যাকাত দিতে পারবেন তার অধীনে বা তার মালিকানাধীন এ সম্পদ থাকা। নিজের ইচ্ছামত ভোগ বা ব্যবহারের পণ্য অধিকার থাকা। সেই সম্পদের কোন মালিকানা না থাকা।
সম্পদকে প্রবৃদ্ধশীল হতে হবে সম্পদ থেকে বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতা থাকতে হবে। যেমন, গরু, মহিষ, ব্যবসার মাল, নগদ অর্থ ইত্যাদি। তবে ব্যবহারের মালামাল বা চলাচলের বাহন দ্বারা যাকাত প্রদান করা যাবে না। যাকাত দিতে হলে সাধারণত ৫২.৫ তোলা রুপা এবং ৭.৫ তুলা স্বর্ণ।
দুইটা মিলেই যদি ৫২.৫ তোলার সমান সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। আমাদের সারা বছরে মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ থেকে যাবে শুধুমাত্র তার উপরে যাকাত ফরজ হবে। যে যাকাত প্রদান করবে অবশ্যই তার কোন ঋণ থাকা যাবে না। মানে তাকে ঋণ মুক্ত থাকতে হবে।
যাকাত দেওয়ার ফজিলত
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যাকাতকারীদের জন্য সুখবর দিয়েছেন। যারা যাকাত প্রদান করবে তাদের পরকালে মুক্তি দেবেন আল্লাহ তায়ালা। যারা যাকাত দেয় তাদের জন্য আল্লাহ তা'আলা বিশাল পুরস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন।
সূরা বাকারা ২৭৭ নাম্বার আয়াত আল্লাহতালা বলেন, যারা ঈমান আনায়ন করেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং সালাত কায়েম করেছে এবং যাকাত আদায় করেছে ওই ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকটে উত্তম পুরস্কার রয়েছে। আরও আল্লাহতালা বলেছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য আখেরাত এবং দুনিয়াতে কোন চিন্তার কারণ নেই।
আর যাকাতের পুরস্কার যেহেতু আল্লাহতালা দিবেন সুতরাং এ পুরস্কার অন্যান্য পুরস্কার থেকে অনেক বেশি সুন্দর। আল্লাহতালা সূরা নিসাতে উল্লেখ করেছেন যারা সালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে, এই কাজগুলো যখন করে তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন আমি তাদের জন্য অচিরেই মহান পুরস্কারে পুরস্কৃত করব।
যাকাত বন্টনের খাতসমূহ
পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে সূরা আত তাওবান ৬০ নাম্বার আয়াতে যাকাত বন্টনের আটটি খাত সম্পর্কে। যাদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে তারা মূলত এই আট টি খেতে যাকাত প্রদান করতে পারবে। যাকাত বন্টনের খাতসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো।
- ফকির
- মিসকিন
- ক্রীতদাস
- যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী
- মুসাফির
- নওমুসলিম
- ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যে সকল ব্যক্তিদের সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি।
- নিজ দেশের ধনী হলেও বিদেশে আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি।
যাকাত কত টাকা দিতে হবে
যাকাত করার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। চাইলে ও যাকাত সবাই করতে পারবে না। উপরে আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি যাকাত কারা করতে পারবে তা সম্পর্কে। যাকাত দিতে হলে অবশ্যই যাকাতকালীন দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পরে তার সাড়ে ৫২ তোলা পরিমাণ রুপা এবং সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ বা তার সমমূল্য ব্যবসার মালিকানা থাকলে। তার ওপর মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ হারে যাকাত প্রদান করা ফরজ। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি মোট পরিমাণ আড়াই শতাংশ যাকাত দিতে হবে।
যাকাত কাদের উপর ফরজ
যাকাত সব ব্যক্তির উপর ফরজ নয়। যারা নিশাত পরিমাণ সম্পদের মালিক এমন নর-নারীদের ওপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। তবে যাদের অর্থ সম্পদ রয়েছে তাদের উপর যাকাত ফরজ। শুধু অর্থ সম্পদ থাকলে হবে না তাদের ঋণ মুক্ত থাকতে হবে। এবং তাদের সম্পদ নিজ মালিকাধীন থাকতে হবে।