৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। ঐতিহাসিক যে ভাষণ ৭ই মার্চ দেওয়া হয়েছিল সেই ময়দানের নাম বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ এখানে শেখ মুজিবুর রহমান এই ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন। ৩০ শে অক্টোবর ২০১৭ সালে ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ
১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ ঢাকা রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৭ মার্চের ভাষণটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ভাষণটি বিকেল ২টা:৪৫ মিনিট এ শুরু হয় এবং বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ হয়।
উল্লেখিত ভাষণটি ১৮ মিনিট স্থায়ী। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আহ্বান জানান। উক্ত ভাসনটির একটি লিখিত ভাষ্য ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক এটা কিছুটা পরিমার্জিত হয়েছিল।
এটি পরিমার্জনের মূল কারণ ছিল সামরিক আইন প্রত্যাহার করা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। উল্লেখিত ভাষণটি মোট ১৩ টি ভাষাই অনুবাদ করা হয়। সর্বশেষ অনুবাদ করা হয় কুর্মালি ভাষায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয় নিউজ ম্যাগাজিনে।
৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি
১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তান সামরিক শাসক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে কোনো ভাবে তারা তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ঢাকা পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন।
কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত করা হয় পহেলা মার্চে। এই খবর যখন পূর্ব পাকিস্তানরা জানতে পারে। তখন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় হরতাল পালন করেন। আর ৩রা মার্চে পুরো দেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়।
৩নে মার্চ একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয় পল্টন ময়দানে যা অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত।মূলত এই পটভূমিকেই ঘিরেই ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ৭ মার্চ এ ভাষণটি প্রদান করেন।
৭ মার্চের ভাষণ রেকর্ড
তৎকালীন সময়ে ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে যে ভাষণটি শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন। সেই ভাষণটি পাকিস্তান সরকার টেলিভিশন এবং রেডিওতে সম্প্রচার করতে দেন নি। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাউদ্দিন।
একসাথে ফরিদপুর জেলার পাঁচটি আসনে এম আব্দুল খায়ের ৭ মার্চের এই ভাষণ ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এই কাজে সাহায্য করেন তৎকালীন চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ও অভিনেতা আবুল খায়ের। তিনি মূলত স্বাধীন মার্চের এই ভাষণ এর ভিডিও ধারণ করেন। ১৯৭১ সালে এইচ এন খন্দকার এই ভাষণের অডিও রেকর্ডটি করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে অডিও ও ভিডিও রেকর্ডকে একত্রিত করা হয়। অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডের একটি অনলিপি শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া হয়। আর তার সাথে অডিওর একটি অনুলিপি ভারতে পাঠানো হয়। আরো এই অডিও টির ৩০০০ অনুলিপি করে সারা বিশ্বে বিতরণ করা হয়।
৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়া
ইউনেস্কো ৩০ শে অক্টোবর ২০১৭ সালে এই ঐতিহাসিক ভাষণকে ডকুমেন্টারি হেরিটেজ বা (বিশ্ব প্রমান্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেন। শেখ মুজিবরের এই ভাষণটি সহ আরো মোট ৭৭ টি গুরুত্বপূর্ণ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পুরো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিল গুলোকে ইউনেস্কো সংরক্ষণ করে রাখেন। মেমরি অফ দা ওয়ার্ল্ড এ এ পর্যন্ত ৭ই মার্চের ভাষণ সহ ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহীত হয়েছে।
৭ মার্চের ভাষণের অনুবাদ
জাপানে যে বাংলাদেশ দূতাবাস রয়েছে ২০১৯ সালে জুন মাসে ৭ই মার্চের ভাষণটি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এটি সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়। কিন্তু বিদেশী ভাষা হিসেবে জাপানি ভাষায় প্রথম অনুবাদ করা হয়।
ক্যাটেগরিঃ
Education