গলা ব্যথা কেন হয় | গলা ব্যথার চিকিৎসা | গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় |
গলা ব্যথা কেন হয়
মূলত ইনফেকশনের কারণে গলা ব্যথা হয়। গলা ব্যথার যে লক্ষণ গুলো রয়েছে সেগুলো মূলত গলায় ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। গলা ব্যথা মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। গলা ব্যথার কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস সহ প্রায় ২০০ এর অধিক উদ্ভিজ্জাণু রয়েছে। গলা ব্যথার জন্য একটি বিশেষ ধরনের ভাইরাস হল (জি এ এস)। এই ভাইরাসটি ১৫ পার্সেন্ট থেকে ২০ পার্সেন্ট বাচ্চাদের গলা ব্যথার কারণ হয়ে থাকে।গলা ব্যথার লক্ষণ
গলা ব্যথা রোগটি যতটা স্বাভাবিকভাবে মানুষ ভাবে ঠিক ততটা স্বাভাবিক নয়। গলা ব্যথা কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন 👇👉শুকনো গলা খটখটে হয়ে যায়,
👉গলায় খুসখুসে ভাব হয়,
👉হা করলে ব্যথা অনুভূত হয়,
👉খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসে।
👉গলা ব্যথার উপসর্গ?
কাদের গলায় ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে
গলা ব্যথায় প্রায় সকল পেশার মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে বিশেষভাবে আক্রান্তের দিক থেকে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি। যার কারণে শিশুদেরকে অনেক সচেতন রাখতে হবে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না গলা ব্যথা যদি দেড় মাস বা ৩ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত থাকে তাহলে তা হার্ট অথবা কিডনিতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হয়।গলা ব্যথা প্রতিরোধ
আপনারা অনেকেই রয়েছেন যারা গলা ব্যথায় ভুগে থাকেন। যে কারণে আপনারা জানতে চান গলা ব্যথা প্রতিরোধ সম্পর্কে। গলা ব্যথা প্রতিরোধ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো লবণ এবং গরম পানি দিয়ে গড় গড় করা। ব্যথা প্রতিরোধের আপনারা আদা বা আদার রস লবঙ্গ মধু এসকল উপাদানগুলো খুব আরামদায়ক।
গলা ব্যথার চিকিৎসা
আপনারা অনেকদিন ব্যথার রোগে ভুগে থাকেন। গলা ব্যথা চিকিৎসা সময়মতো না করলে এটা দ্বারা অনেক বড় রকমের সমস্যা হতে পারে। হার্ড এবং কিডনিতে ইনফেকশন হতে পারে এ কারণে। যে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আপনাদের সকলের জন্য অনেক বেশি জরুরী। প্রথমত প্রাথমিক উপায় চেষ্টা করবেন যদি ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গলা ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত
গলা ব্যথা হলে কিছু উপাদান আছে যেগুলো খেলে আপনার ব্যথা অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভালো হয়েও যেতে পারে। যেমন, লবণ এবং গরম পানি নিয়ে গড় গড় করা। আদা অথবা আদার রস খাওয়া। লবঙ্গ খাওয়া। মধু ইত্যাদি এ সকল উপাদানগুলো খাওয়া উচিত গলা ব্যথা করলে।
গলা ব্যথা যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের নানান রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো গলা ব্যথা। কিছু খাবার এই সমস্যা গুলো আরো বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে যার কারণে সচেতন থাকাটা জরুরী। আসুন জেনে নেই এমন কিছু খাবারের নাম,- দই যদি আপনার প্রিয় খাবার হয়ে থাকে তাহলে শীতকালে এটি থেকে লোভ কিছুটা কমাতে হবে। দই মানুষের বুকে জমে থাকা শ্লেষ্মা আরো অনেক বেশি ঘন করে ফেলেন যার ফলে অতিরিক্ত কাশি হয়।
- পনির এমন একটি খাবার যাতে ক্যালসিয়াম ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। গলা ব্যথা থাকা অবস্থায় কোনভাবেই পনির খাওয়া ঠিক নয়। পনির এর কারণে মানুষের ’কফ’আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।
- গলা ব্যথা অবস্থায় টক জাতীয় ফল যেমন তেতুল, আমের আচার ইত্যাদি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয়। টক জাতীয় খাবার গুলো অনেক লোভনীয় হলেও এগুলো গলাব্যথা বাড়াই।
- তাজা খাবার হজম করা বেশ কঠিন। এছাড়াও এই খাবারগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা, উচ্চতাপে রান্না করার ফলে এই খাবারগুলো খেলে গলায় অস্বস্তি ও চুলকানি সৃষ্টি হয়।
- মোড়কজাত ফলের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কৃত্রিম রঙ এবং সংক্রমণ থাকে যা পাকস্থলীর এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
আমাদের যখন গলা ব্যথা হয় তখন আমরা বুঝতে পারি না কোন সময় আমাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত, অনেকে আবার নিজে নিজে নানান রকম ওষুধ কিনে সেবন করতে থাকে, যার ফলে গলা ব্যথা দূর হওয়ার বিপরীতে অনেক বেশি হয়ে যায়। যার কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া সব থেকে জরুরি। আসুন জেনে নেই কোন উপসর্গ হলে আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হব...- যখন অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হবে
- যদিও ঢোক গিলতে সমস্যা হয়, পূর্বে যদি টনসিল সমস্যা থেকে থাকে।
- খাওয়া-দাওয়া করতে অসুবিধা অথবা মুখ হা করতে সমস্যা
- গলা ব্যথা হলে জ্বর হয়, জ্বরের মাত্রা যদি ১০১ ডিগ্রি হয় তাহলে।
- ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে এবং ঘাড়ে মৃদু ব্যথা শুরু হলে।
- থুথু এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে
গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
শীত কালীন সময়ে নানান ধরনের রোগের পাশাপাশি একটি কমন রোগ আমাদের সবার হয়ে থাকে। সেটি হল গলা ব্যথা। ঘুম থেকে সকালে ওঠার পরেই দেখা যায় আমাদের গলা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। যা সত্যিই অস্বস্তির কারণ। এতে কি আমরা খুব দ্রুত উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আসুন আমরা জেনে নিন গলা ব্যথা প্রতিরোধের ঘরোয়া কিছু টিপস।গলা ব্যথায় মেথির ব্যবহার
স্বাস্থ্যের উপকারিতার ওপর নির্ভর করে মেথির গুরুত্ব অপরিসীম। মেথি বীজ গলা ব্যথা সারাতে অনেক কাজ দুর্দান্ত করে থাকে, মেথির তেল নিয়মিত লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছুদিনের মধ্যে গলা ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও মেথি, চা পান করলেও গলাব্যথা অনেকটাই কম হবে। বেশি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ব্যথা উপশমের জন্য মেথি ব্যাপক ভাবে কাজ করে। এটি ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে গর্ভবতী নারীদের জন্য মেদে ব্যবহার ঠিক না। গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই মেথি এড়িয়ে চলতে হবে।গলা ব্যথায় বেকিং সোডা
সাধারণত আমরা নানান ধরনের কাজে বেকিং সোডার ব্যবহার করে থাকে, তবে আমাদের জেনে রাখা ভালো গলা ব্যথা সারাতে বেকিং সোডা ব্যাপক ভাবে কাজ করে। বেকিং সোডা ও লবণ পানি দিয়ে আপনি যদি গারগেল করে ব্যবহার করেন তাহলে গলা ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে তথ্যমতে এক কাপ গরম পানিতে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা এবং ১/৪ চা-চামচ লবণ মিশিয়ে গারগেল করে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর করে গলায় ব্যবহার করলে দ্রুত গলা ব্যথা কমে যাবে।
গলা ব্যথায় গোলমরিচের ব্যবহার
আমরা হয়তো সবাই জানি রান্নার কাজে ব্যবহার হয় গোলমরিচ, তবে জেনে নেওয়া ভালো গলা ব্যথার প্রতিরোধক হিসেবে গোলমরিচ অনেক ভালো কাজ করে। গোলমরিচের রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ভাইরাল। উপাদানগুলো গলা ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে থাকে। গোলমরিচের দানা পানির মধ্যে ফুটিয়ে চায়ের সাথে পান করলে দ্রুত গলা ব্যথা কমে যাবে।
গলা ব্যথায় মধুর উপকারিতা
মধু শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মধু আমাদের শরীরের নানান রকমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। আপনি যদি চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার গলা ব্যথা কমে যাবে। বিভিন্ন রকম গবেষণায় দেখা গেছে মধুতে থাকা উপাদানগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্ষত নিরাময় এবং গলার প্রদাহ নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় গলা ব্যথা দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।